
ফান্ডিং নিয়ে প্রতিটি উদ্যোক্তাই কিছুটা চিন্তিত থাকেন। বাংলাদেশে স্টার্ট আপ ফান্ডিং (startup funding in Bangladesh) নিয়ে অনেকেরই স্পষ্ট ধারনা না থাকায় অনেকেই দারুন স্টার্ট আপ আইডিয়া থাকা সত্ত্বেও ফান্ডিং এর অভাবে আইডিয়া নিয়ে কাজ করতে পারেন না। আশা করি তারা আমাদের এই আর্টিকেল থেকে উপকৃত হবেন। চলুন দেখে নিই বাংলাদেশে স্টার্ট আপ ফান্ডিং (Startup funding in Bangladesh) পেতে হলে আপনাকে কি করতে হবে।
স্টার্ট আপ ফান্ডিং কি (What is Startup Funding)?
বাংলাদেশে স্টার্ট আপ ফান্ডিং (startup funding in Bangladesh) সম্পর্কে জানার আগে আপনাদের স্টার্ট আপ বিজনেস (Startup Business) বলতে আমরা কি বুঝি সেটা একটু পরিষ্কার করে নেয়া জরুরী। তাহলে আপনি স্টার্ট আপ ফান্ড (Startup fund) পাওয়ার যোগ্য কি না অথবা এই ফান্ড পেতে হলে আপনাকে কোন বিজনেস মডিউল ফলো করতে হবে সে সম্পর্কে ধারনা ক্লিয়ার হবে।
স্টার্ট আপ বিজনেস বলতে স্বাভাবিকভাবে আমরা বুঝি, যেই ব্যবসাটি তার প্রাথমিক স্টেজে আছে এবং আরও বিস্তারের জন্য তার ফান্ডিং এর প্রয়োজন।
এখন ভাবতে পারেন, দুনিয়ার সকল বিজনেসই তো এভাবে শুরু হয়। তাহলে এই ‘স্টার্ট আপ ব্যবসা (Startup business)’ নামকরনের আবশ্যকতা কী ছিলো?
আসুন ক্লিয়ার করি। স্টার্ট আপ বলতে আমরা সাধারনত এমন ধরনের বিজনেসকে বুঝি যা টেকনোলজি নির্ভর এবং যেই বিজনেসের মার্কেট একটা লোকালিটিতে আবদ্ধ না। উদাহরণ স্বরূপ, রাইড শেয়ারিং এ্যাপ “পাঠাও” এই বছরের মার্চে স্টার্ট আপ লোন পেয়েছে।
রাইড শেয়ারিং এ্যাপের বিজনেস একটি ছোটো জায়গায় আবদ্ধ না এবং এই ব্যবসাটি পরিচালনা করার জন্য আধুনিক টেকনোলজির দরকার। তার মানে এই না যে, আপনাকে পাঠাও এর মতো ইউনিক আইডিয়া এবং দক্ষতা নিয়েই আগাতে হবে। আপনি ছোটোখাটো ব্যবসা যেমন ই-কমার্স বিজনেস দিয়েও পেতে পারেন স্টার্ট আপ ফান্ড (Startup fund).
আপনি মুদি দোকান বা স্টক বিজনেস করার জন্য স্টার্ট আপ লোনের আবেদন করতে পারবেন না। আপনার বিজনেস মডিউলটা হতে হবে টেকনোলজি নির্ভর এবং এর মার্কেট হতে হবে বড়। যদি তা করতে পারেন তাহলে এমনি একটি আইডিয়ার জন্যও আপনি বাংলাদেশে স্টার্ট আপ ফান্ড (Startup fund in Bangladesh) পেতে পারেন।
যে সকল সেক্টরে বাংলাদেশে স্টার্ট আপ ফান্ডিং (Startup Funding in Bangladesh) পাওয়া যায়
তো এখন আপনারা জানেন স্টার্ট আপ ফান্ডিং (Startup Funding) বলতে কি বুঝি আমরা। এখন চলুন দেখা যাক বাংলাদেশ স্টার্ট আপ ফান্ডিং (Startup Funding in Bangladesh) কোন কোন সেক্টরে দেয়া হয়।
যে সকল সেক্টরে এই ফান্ড দেয়া হয় তা হলোঃ
- ফাইনেন্সিয়াল টেকনোলজি/ ফাইনেন্সিয়াল সার্ভিস (Fintech/Financial Services)
- হেলথ টেক/ স্বাস্থসেবা (Health tech and health care)
- এন্টারপ্রাইজ সলিউশন/ সফটওয়্যার (Enterprise solution and software)
- বিনোদন / লাইফস্টাইল (Entertainment and lifestyle)
- ইকমার্স / রিটেইল (Ecommerce and Retail)
- ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি (Frontier technology)
- কোর টেকনোলোজি/ আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স/ডিপ টেক (Core Tech, AI and Deep tech)
- এডুকেশন টেকনোলোজি (EdTech)
- খাবার এবং কৃষি টেক (Food and Agro Tech)
- আইওটি (IOT)
- লজিস্টিক্স এবং মোবিলিটি (Logistics and Mobility)
- ইমার্জিং টেকনোলোজির সাথে যুক্ত যেকোনো আইডিয়া (Emerging Tech related ideas)
আপনি যদি উপরের কোনো সেক্টরের কাজের সাথে যুক্ত থাকেন এবং আপনার ব্যবসা শুরুর দিকে থাকে তাহলে আপনি ফান্ডের জন্য আবেদন করতে পারেন। যদি আপনার আইডিয়া বা ব্যবসা টেক সম্পৃক্ত হয় এবং উপরের কোনো ক্যাটাগরিতে আপনি নাও পড়েন তাহলেও আপনি আবেদন করতে পারবেন। বাংলাদেশ সরকার যেকোনো টেকনোলজিক্যাল ব্যবসাতে ইনভেস্ট করতে আগ্রহী।

বাংলাদেশে স্টার্ট আপ ফান্ড(Startup Finding in Bangladesh) পেতে হলে কি করতে হবে?
এই ফান্ড পেতে হলে আপনাকে প্রথমে আপনার বিজনেস সম্পর্কিত কিছু ডকুমেন্ট রেডি করতে হবে, যাকে কেতাবি ভাষায় বলা হয়, পিচ রেডি করা। চলুন দেখে নেই আপনাকে কি কি করা লাগবে?
লিখিত ডকুমেন্ট (Written Document)
- আপনার কোম্পানির নাম, ট্যাগ লাইন এবং লগো।
- সমস্যা এবং আপনি কিভাবে তার সমাধান করবেন ? মার্কেটে কোন সমস্যাটাকে টার্গেট করে আপনার বিজনেস আপনি গ্রো করতে চান তার বিবরন।
- আপনার মার্কেট সাইজ কত বড়? আপনার টার্গেট মার্কেট কত বড় এবং টোটাল মার্কেটে এর শেয়ার কতটুকু।
- আপনার কম্পিটেটর কারা? বর্তমানে তাদের মার্কেটে অবস্থান কেমন এবং আপনার সলিউশনটি কম্পিটেটরদের চাইতে কোন দিক দিয়ে আগানো?
- আপনার কি প্রয়োজন? ফান্ড, মেন্টর নাকি অপারেশনাল সাপোর্ট?
- আপনার টেকনোলোজি আর্কিটেকচার কি? ছোটো করে লিখুন।
- আপনার বিজনেস স্ট্র্যাটেজি কি?
- আপনি কিভাবে বিজনেস থেকে টাকা ইনকাম করার প্ল্যান করছেন? মার্কেট শেয়ার, মূল্য এবং রেভেনিও মডেল কেমন হবে?
- আপনার ম্যানেজমেন্ট টিম সম্পর্কে লিখুন।
ভিডিও পিচ (Video Pitch)
এরপর আপনাকে একটি ভিডিও পিচ রেডি করতে হবে। ভিডিও পিচের জেনারেল গাইডলাইনটি হলোঃ
ভিডিও ৫ মিনিটের বেশি হবেনা।
ভিডিও ফরম্যাট avi/mp4 হতে হবে।
ভিডিওতে যারা থাকবে তারা সবাই প্রজেক্টের সাথে সরাসরি যুক্ত থাকা লাগবে।
স্লাইড থেকে পড়বেন না। নিজে পরিষ্কার করে বলবেন।
পাওয়ার পয়েন্ট ব্যবহার করলে স্লাইড খুবই সাধারন রাখুন।
ভিডিও পিচে যা থাকবে
- আপনার বিস্তারিত বিজন্যাস প্ল্যান।
- আপনি কাদের কাছে আপনার প্রডাক্ট বা সার্ভিস বিক্রি করতে চান?
- আপনার বিজনেস মডেল।
- আপনার ব্যবসার বর্তমান অবস্থা।
- আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।
- আপনার কম্পিটেটর সম্পর্কে বিস্তারিত।
- আপনি কিভাবে আপনার কম্পিটেটরদের থেকে এগিয়ে আছেন?
- আপনার কি প্রয়োজন?
- আপনার টেকনিক্যাল আর্কিটেকচার এবং
- আপনার ম্যানেজমেন্ট টিম (১ মিনিট)
এই ব্যাপারে বিস্তারিত গাইডলাইন আপনি পেতে পারেন বাংলাদেশ সরকারের আইডিয়া ওয়েবসাইটের এই পেজে থেকে।

আবেদন এপ্রুভ (অনুমোদিত) করার পদ্ধতি কি? (What are the processes to approve your application?)
আবেদন করার পর স্টার্ট আপ ফান্ড বাংলাদেশ (Startup Fund Bangladesh) এর টিম আপনার এপ্লিকেশন যাচাই বাছাই করবে। তারা যে বিষয়গুলোকে ফোকাস করে ফান্ড এপ্রুভ করে সেগুলো হলোঃ
- সমস্যা।
- আপনার সমাধান।
- আপনার প্রডাক্ট মার্কেটের জন্য কতটা ঠিক।
- মার্কেটের অবস্থা।
- আপনার বিজনেস মডেল এবং
- আপনার টিম।
উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে আপনার স্টার্ট আপ (Startup) বিজনেসটি যদি তাদের পছন্দ হয় তবেই আপনি বিনিয়োগ পাবেন।
কত টাকা ফান্ড দেয়া হয় এবং কতদিনের জন্য?
কত টাকা ফান্ড আপনি পেতে পারেন তা নির্ভর করে আপনার বিজনেস মডেল এবং বর্তমানে আপনার বিজনেস কোন অবস্থানে আছে তার উপর। বাংলাদেশ সরকার তিনটি স্টেজে এই ফান্ড দিয়ে থাকে।
আইডিয়া বা (Pre-seed Stage)
আপনার কোনো বাস্তব ব্যবসা না থাকলেও ভালো আইডিয়া শেয়ার করতে পারলে আপনি বাংলাদেশ স্টার্ট আপ ফান্ড (Startup Funding in Bangladesh) পেতে পারেন।
আইডিয়া স্টেজে সর্বোচ্চ ১০ লক্ষ টাকা বিনোয়োগ দেয়া হয়।
সিড স্টেজ (Seed Stage)
আপনি যদি কিছুদিন ধরে কোনো স্টার্ট বিজনেস পরিচালনা করছেন এমন হয় সেইক্ষেত্রে আপনি এই ফান্ড পেতে পারেন ব্যবসাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
এই স্টেজে আপনি ১ কোটি পর্যন্ত বিজনেস ফান্ড পেতে পারেন।
গ্রোথ স্টেজ (Growth Stage)
আপনি যদি বেশকিছুদিন ধরে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন এমন হয় তবে আপনি এই ফান্ডটি পেতে পারেন।
এইক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ দেয়া হয়।
এই তিনটি ছাড়াও গাইডেড স্টার্ট আপ, টার্গেটেড ইনভেস্টমেন্ট, স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ, কো ইনভস্টমেন্ট ইত্যাদি ক্যাটাগোরিতেও আপনি ফান্ড পেতে পারেন। এই ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে আপনি বাংলাদেশ সরকারের আইডিয়া ওয়েবসাইটের এই পেজে ভিজিট করতে পারেন।
ফান্ড পেতে কত সময় লাগে এবং কিভাবে আবেদন করব?
ফান্ড পেতে সাধারণত ৩/৪ মাস সময় লেগে থাকে। তবে ক্ষেত্রে বিশেষে বেশি সময়ও লাগতে পারে। আপনি পুরো টাকা একবারেও পেতে পারেন আবার ইন্সটলমেন্টেও পেতে পারেন। ৫ থেকে ৮ বছরের মাঝে আপনাকে এই টাকা পরিশোধ করতে হবে।
আপনি যদি আইডিয়া বা প্রিসিড অবস্থার জন্য এপ্লাই করতে চান তাহলে আপনাকে বাংলাদেশ সরকারের আইডিয়া ওয়েবসাইটের মাধ্যমে করা লাগবে।
আর আপনি যদি সিড অথবা গ্রোথ স্টেজের জন্য আবেদন করতে চান তাহলে এই বছর ২০২১ এর মার্চে চালু হওয়া স্টার্ট আপ বাংলাদেশ ওয়েবসাইট থেকে আবেদন করতে হবে।
শেষ কথা
এই বছরের মার্চে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন ৫০০ কোটি টাকা স্টার্ট আপ ফান্ড বাংলাদেশের (Startup funding in Bangladesh) এর জন্য নির্ধারন করেছে। আপনি ৪% সুদে এই ঋণ নিতে পারবেন। আপনার হাতে যদি এমন কোনো প্রজেক্ট থেকে থাকে তাহলে আর দেরি না করে আবেদন করে ফেলুন এখনি।