বাংলাদেশে আমদানি ব্যবসা (Import Business in Bangladesh) কিভাবে শুরু করবেন?

বাংলাদেশ আমদানি ব্যবসা (Import Business in Bangladesh) খুবই লাভজনক একটি ব্যবসায়ীক উদ্যোগ। বাংলাদেশের গ্রাহকদের মাঝে বিদেশী জিনিস কেনার একটি বাড়তি ঝোঁক সর্বদাই লক্ষ্য করা যায়। আপনি যদি স্বল্প মূল্যে ভালো প্রডাক্ট ইম্পোর্ট (Import) করতে পারেন তাহলে এই ব্যবসায় সফল হওয়া খুব একটা কষ্টকর কাজ না। 

যদিও ইম্পোর্ট বিজনেস (Import Business) শুরু করার আগে আপনাকে বিশেষ কিছু দিকে নজর দিতে হবে। যেমন, আপনি কোন প্রডাক্ট ইম্পোর্ট করতে চান, কে আপনার সাপ্লাইয়ার হবে এবং কিভাবে আপনি সেটা বিক্রি করতে চান, প্রথমত এই বিষয়গুলো আপনাকে ঠিকঠাক করে নিতে হবে। 

বাংলাদেশে অনেক ব্যবসায়ী বিভিন্ন সেক্টরে প্রচুর প্রডাক্ট বিদেশ থেকে ইম্পোর্ট করে বিক্রি করছে। চাইলে আপনিও তাদের সাথে যোগ দিয়ে হতে পারেন একজন সফল ব্যবসায়ী। চলুন আলোচনা করা যাক, কিভাবে বাংলাদেশ আমদানি ব্যবসা (Import Business in Bangladesh) শুরু করতে পারেন আপনি। 

কেনো শুরু করবেন বাংলাদেশে আমদানি ব্যবসা (Import Business in Bangladesh)?

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে বাংলাদেশ জুন, ২০২১ সনে ৫১৭ কোটি বিলিয়ন টাকার পন্য বিদেশ থেকে আমদানি করেছে, যা আগের মাসের চাইতে প্রায় ১০০ কোটি বিলিয়ন বেশি। বাংলাদেশে ১৬ কোটির উপর মানুষের বসবাস। মার্কেট বিবেচনায় যা অন্য অনেক দেশের চাইতে অনেক বড়। 

শুধু মার্কেট বিবেচনাতেই না, প্রডাক্টের বৈচিত্র বিবেচনাতেও বাংলাদেশের ইম্পোর্ট মার্কেটের চাহিদা অনেক বেশি। পেট্রোলিয়াম পদার্থ থেকে শুরু করে বাচ্চাদের খেলনা, সবকিছুরই এই দেশে চাহিদা আছে। 

ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী যেমন মোবাইল ফোন, কম্পিউটার ইত্যাদির চাহিদা তো আপনারা জানেনই। তাই আপনি যদি বাংলাদেশ আমদানি ব্যবসা (Import Business in Bangladesh) শুরু করতে চান, এখনই তার উৎকৃষ্ট সময়। 

বাংলাদেশে আমদানি ব্যবসা (Import Business in Bangladesh) শুরু করবেন যেভাবে 

Import Business in Bangladesh

মার্কেট রিসার্চ এবং প্রডাক্ট সিলেকশন (Market Research and Product Selection )

শুরুটা করা লাগবে আপনি কোন সেক্টরের প্রডাক্ট ইম্পোর্ট করতে চান এবং কোন প্রডাক্ট বা প্রডাক্টসমূহ আমদানি করতে চান। তবে শুধু প্রডাক্ট সিলেক্ট করে বসলেই হবেনা। আপনাকে তার আগে অবশ্যই মার্কেট রিসার্চ করে ঐ প্রডাক্টটির মার্কেটে কতটা চাহিদা আছে তা জেনে নিতে হবে।

 এইক্ষেত্রে নিচের ব্যাপারগুলো মাথায় রাখবেন, 

  • মার্কেটে বর্তমানে আপনার প্রডাক্টের কেমন চাহিদা? 
  • এই চাহিদা কি বাড়ছে না কমতে পারে? 
  • এটা কি সিজনাল প্রডাক্ট নাকি সারা বছর চলবে? 
  • এই প্রডাক্টের কম্পিটেটররা কতটা শক্তিশালী? 
  • এই প্রডাক্টের ভবিষ্যৎ কেমন? 

সিজনাল প্রডাক্ট যেমন এসি, ফ্রিজ ইত্যাদি আমদানি না করাই ভালো। শুরুতে এমন কিছু ইম্পোর্ট (Import) করুন যেগুলো সারা বছরই মার্কেটে সমান চাহিদা থাকে (যেমনঃ টিভি, খেলনা, মোবাইল ফোন, কসমেটিক্স ও জামা ইত্যাদি।)

তবে হ্যা, যে প্রডাক্টই আপনি ইম্পোর্ট করার পরিকল্পনা করছেন আপনার অবশ্যই সেই প্রডাক্ট সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা থাকা জরুরী এবং প্যাশন থাকা দরকার। শুধু ব্যবসার জন্য নেমে গেলে খুব ভালো সম্ভাবনা আছে আপনি মাঝপথে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারেন। তাছাড়াও, টেকনিক্যাল বিষয়গুলো বুঝার জন্য আপনাকে সর্বদাই এক্সপার্ট কারো সাহায্য নিতে হবে। 

এতে আপনার ব্যবসায় ঝুঁকি যেমন থাকবে, তেমন আর্থও বেশি খরচ হবে। 

কোন দেশ থেকে প্রডাক্ট আমদানি করবেন (From Which Country Will You Import)? 

প্রডাক্ট সিলেকশনের পরে আপনার সবচাতে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে দেশ সিলেক্ট করা। কোন দেশ থেকে ইম্পোর্ট করলে আপনার সবচাইতে বেশি লাভ হতে পারে সেইটা এখন বের করে নিন। 

নির্দৃষ্ট প্রডাক্টের জন্য একটি দেশ ভালো হয়। যেমন আপনি যদি ইলেক্ট্রনিক্স প্রডাক্ট আমদানি করতে চান তবে চায়না (China) খুব সম্ভবত আপনার প্রথম পছন্দ হবে। 

আবার যদি আপনি দুগ্ধ জাতীয় (Dairy Items) আইটেম  ইম্পোর্ট করতে চান তাহলে নিউজিল্যান্ড আপনার প্রথম পছন্দ হবে। অথবা যদি  আপনি স্পোর্টস সামগ্রী (Sports products) ইম্পোর্ট করতে চান তাহলে পাকিস্তান (ক্রিকেট ব্যাট) অথবা ইউরোপের দেশসমূহ ভালো চয়েজ হবে। 

এই ব্যপারে আপনার একটু ডিটেইল রিসার্চ করে নিতে হবে। শুধু আশেপাশের লোকজনের কথায় কান না দিয়ে অনলাইনে রিসার্চ করাটা ভালো হবে। 

Import Business in Bangladesh

সাপ্লাইয়ার নির্বাচন (Selecting the supplier)

দেশ নির্বাচন শেষ? বাংলাদেশে আমদানি ব্যবসা (Import Business in Bangladesh) এর অনেক কাজই তাহলে আপনি গুছিয়ে ফেলেছেন। এখন চলুন সাপ্লাইয়ার নির্বাচন করা যাক। 

সাপ্লাইয়ার নির্বাচনে আপনাকে অবশ্যই খুবই সতর্ক থাকা লাগবে। সাপ্লাইয়ার অনুযায়ী প্রডাক্ট কোয়ালিটি এবং দাম অনেকটাই পরিবর্তিত হয়ে থাকে। 

সাপ্লাইয়ার নির্বাচন করা আসলেই কঠিন একটি কাজ। এইক্ষেত্রে আপনি বাংলাদেশে প্রডাক্ট সাপ্লাই করছেন এমন কোনো সাপ্লাইয়ারের সাথে যোগাযোগ করে দেখতে পারেন। যদি তারা আপনার বাজেটের বাইরে হয় অথবা সেরকম কাউকে না পান তাহলে আপনি যা করতে পারেনঃ 

  • চ্যাম্বার অব কমার্সে যোগাযোগ করে দেখতে পারেন। 
  • ট্রেড ফেয়ারগুলো এ্যাটেন্ড করে দেখতে পারেন। কর্পোরেট বানিজ্যমেলাতে প্রচুর ম্যানুফেকচারার আসে। 
  • অনলাইনে রিসার্চ করতে পারেন। একাধিক সাপ্লাইয়ারের কাছ থেকে কোট (Quote) চাইবেন আর এরপর মিলিয়ে দেখবেন কে কম দামে দিচ্ছে। 
  • যদি ছোটো আকারে প্রডাক্ট আমদানি করতে চান তাহলে B2B ওয়েবসাইটগুলো ভিজিট করতে পারেন। বর্তমানে সবচাইতে প্রসিদ্ধ বিটুবি বিজনেস ওয়েবসাইট হচ্ছে, আলীবাবা ডট কম (Alibaba dot com)। চায়না থেকে প্রডাক্ট আমদানি করলে আপনি এই সাইটের সাহায্য নিতে পারেন। তবে যদি বেশি পরিমানে প্রডাক্ট আমদানি করতে চাইলে আলীবাবা একটু খরুচে হয়ে যাবে। 

ম্যানুফেকচারর নাকি সোর্সিং এ্যাজেন্ট (Manufacturer Or Sourcing Agent)? 

অনেকেই আপনাকে বলবে ম্যানুফ্যাকচারারকেই প্রাধান্য দিতে কিন্তু সেটি সর্বদাই ঠিক নয়। হ্যা, ম্যানুফ্যাকচারার আপনাকে কম দাম দিতে পারবে কিন্তু সোর্সিং এ্যাজেন্টেরও কিছু সুবিধা আছে। 

নতুন প্রডাক্ট আমদানির সময় MOQ (Minimum Order quantity) একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ম্যানুফেকচারারদের এমওকিও বেশিরভাগ সময়ই অনেক বেশি হয়। আপনি যদি আপনার প্রডাক্ট মার্কেটে কেমন চলবে সেই ব্যাপারে নিশ্চিত না হয়ে থাকেন তাহলে একসাথে খুব বেশি প্রডাক্ট আমদানি করাটা আপনার জন্য বিপদজনক হতে পারে। 

এমওকিও ছাড়াও সোর্সার রা আপনাকে অনেক ধরনের প্রডাক্ট একসাথে সাপ্লাই করতে পারবে কিন্তু ম্যানুফেকচারাররা শুধু নিজেদের প্রডাক্টই দিবে। 

অতএব, ভ্যারাইটি আর অল্প এমওকিও হলে আপনি সোর্সিং এজেন্টদের কাছ থেকেই প্রডাক্ট কিনুন। তারপর মার্কেটে যদি ভালো রেসপন্স পান তখন ম্যানুফেকচারের কাছে যান। 

যদি আপনি আপনার প্রডাক্টের মার্কেট চাহিদা সম্পর্কে নিশ্চিত থাকেন তাহলে সরাসরি সাপ্লাইয়ার (Supplier) এর কাছেই যান। 

কাগজ পত্র (Documentation)

বাংলাদেশ আমদানি ব্যবসা (Import Business in Bangladesh) করতে হলে আপনাকে নিম্নের কাজগুলো সম্পন্ন করতে হবেঃ 

  • আই আর সি রেজিস্ট্রেশন IRC Registration 
  • এক্সপোর্ট রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট (ERC)
  • ইনডেন্টিং রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট (Indenting RC)
  • ইম্পোর্ট পারমিট (IP)

তাছাড়াও আপনাকে এলসি (L/C) খোলা, ইম্পোর্ট ডকুমেন্ট (Import document), কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স(Customs clearance) , এলসি পেমেন্ট সিস্টেম, আন্তর্জাতিক শিপিং পদ্ধতি, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার (Freight forwarder) এদের সম্পর্কেও জানতে হবে। 

কাগজ পত্র তৈরি করা এবং আমদানি পরিচালনা করার সামগ্রিক বিষয় জানা খুবই জরুরী ব্যাপার। কারন এখানে আপনার সামান্য একটা ভুল আপনার পুরো ইনভেস্টমেন্টকেই ঝুকিতে ফেলতে পারে। 

তবে শর্টকাট এবং মার্কেট যাচাই এর জন্য আপনি Door to door Freight Service এর সুবিধা গ্রহন করতে পারেন। এতে আপনি কাজগপত্র ছাড়াই ইম্পোর্ট করতে পারবেন। তবে এইক্ষেত্রে নির্দৃষ্ট কিছু প্রডাক্ট ছাড়া আপনাকে ইম্পোর্ট লাইসেন্স অবশ্যই নিতে হবে। 

Door to Door Freight Service এ খরচ বেশি হয়। তাই লং টার্ম বিজনেস বা স্থায়ীভাবে বাংলাদেশে আমদানি ব্যবসা (Import Business in Bangladesh) এর জন্য এটা কোনো স্থায়ী সমাধান না। 

শেষ কথা 

আপনার হাতে যদি পর্যাপ্ত পরিমানে মূলধন থাকে তবে বাংলাদেশ ইম্পোর্ট বিজনেস (Import Business in Bangladesh) খুবই লাভজনক একটি ব্যবসা। তবে অবশ্যই নামার আগে আপনার পরিপূর্ণ জ্ঞান থাকা দরকার এই বিষয়ে। কারন আমদানি একটি রিস্কি ব্যবসাও বটে। আর সামান্য ভুলে আপনার ইনভেস্টমেন্ট হুমকির মুখে পরে যেতে পারে। 

We will be happy to hear your thoughts

Leave a reply

PlanB Solution
Logo
Enable registration in settings - general
Shopping cart