টার্গেট কাস্টমার কি, কেন এবং কিভাবে ??

টার্গেট কাস্টমার কি, কেন এবং কিভাবে ??

আমাদের বেশির ভাই সেলারকেই যদি জিজ্ঞেস করা হয় তার কাস্টমার কারা,দুঃখজনক ভাবে বেশিরভাগেরই উত্তর হয় “দেশের সব মানুষ “। কিন্তু আসলেই কি সব মানুষ কাস্টমার হতে পারে?? নাহলে টার্গেট কাস্টমার ব্যাপারটা কি?? চলুন একটু আলোচনা করা যাক…

কাস্টমার বলতে আমরা সাধারণত বুঝি যিনি প্রোডাক্ট কিনেন। কিন্তু পটেনশিয়াল কাস্টমার বলতে সেই শ্রেনীকে বুঝায় যাদের আপনার পণ্যটি কেনার আগ্রহ এবং সামর্থ দুইটাই আছে। একটু উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা বুঝতে সুবিধা হবে..

মোবাইলের উদাহরণটাই দি, আইফোন কি সব ধরণের মানুষকে টার্গেট করে?? অবশ্যই না, তারা সেই সব মানুষকে টার্গেট করে যাদের আইফোন কেনার ইচ্ছে এবং সামর্থ দুইটাই আছে। ইয়াং এইজের অধিকাংশ ছেলে মেয়েদেরই আইফেনের প্রতি একটা দুর্বলতা থাকে। তাদের কেনার আগ্রহ থাকে, কিন্তু তারপরও আইফোন তাদের পটেনশিয়াল কাস্টমার হিসেবে গণ্য করে না, কারণ তাদের কেনার সামর্থ নেই। যেহেতু তাদের কেনার সামর্থ নেই তাই তাদের টার্গেট করে মার্কেটিংএ খরচ করা মানে পুরোটাই লস এক প্রকার। তাদের পিছনেই মার্কেটিংএ টাকা খরচ করবেন যাদের কাছে পন্য সেল করে খরচ + লাভ তোলে আনতে পারবেন

ঠিক এমনি ভাবে আপনার প্রোডাক্টেরও কিছু টার্গেট কাস্টমার আছে। আপনি ১০ হাজার টাকা দামের শাড়ি বিক্রি করেন। তাহলে কি সব মহিলাই কি আপনার টার্গেট কাস্টমার হবে?? কখনোই না, আপনার টার্গেট কাস্টমার হবে সেই সব শ্রেনীর মহিলারা যাদের এত দাম দিয়ে শাড়ি কেনার আগ্রহ এবং সামর্থ দুইটাই আছে। এখানে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হচ্ছে, শুধু আগ্রহ থাকলেই হবে না তার কেনার সামর্থও থাকতে হবেএবার আসুন দেখি কিভাবে আপনার পণ্যের টার্গেট কাস্টমার বের করতে পারবেন। টার্গেট কাস্টমার খুঁজে বের করার ছোট্ট ছোট্ট কিছু ট্রিক্স আছে, যদি সেগুলো কাজে লাগাতে পারেন তাহলেই কাজটা অনেক ইজি হয়ে যায়।

  • ১. আপনি কি অফার করছেন:- আপনি কি অফার করছেন সেটা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। আপনার প্রোডাক্টটি কাদের জন্য, ছেলে না মেয়ে? যুবক না বয়স্ক? ব্যাচেলর না বিবাহিত?? প্রতিটি প্রোডাক্ট নির্দিষ্ট একটা শ্রেনীর মানুষের কাছেই বেশি গ্রহনযোগ্যতা থাকে। যেমন শাড়ির গ্রহনযোগ্যতা মহিলাদের মধ্যে বেশি। আবার কিছু শাড়ির গ্রহনযোগ্যতা অল্প বয়সের মেয়েদের মধ্যে, কিছু শাড়ি একটু বয়স্কদের মধ্যে বেশি গ্রহনযোগ্যতা থাকে। তাই আপনিই ভেবে দেখুন আপনার প্রোডাক্ট কাদের চাহিদার সাথে মিলছে
  • ২. কম্পিটিটর এনালাইসিস:– টার্গেট কাস্টমার খুঁজে বের করার আরেকটি সহজ উপায় হচ্ছে কম্পিটিটর এনালাইসিস করা। আপনার কম্পিটিটর কাদের টার্গেট করছে,কাদের কাছে পণ্য সেল করছে, তাদের পোস্টগুলোতে কোন ধরণের মানুষ বেশি এনগেজমেন্ট হচ্ছে এসব একটু এনালাইসিস করে নিলেই আপনার টার্গেট কাস্টমার সেট করা অনেক বেশি ইজি হয়ে যাবে।
  • ৩. সার্ভে :- টার্গেট কাস্টমার খুঁজে বের করার আরেকটি সহজ উপায় হচ্ছে সার্ভে করা। বর্তমানে তো অনলাইনকে কাজে লাগিয়ে সার্ভে করা অনেক বেশি ইজি। আপনি প্রোডাক্ট সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন করে রেসপন্সগুলো এনালাইসিস করে নিলেই বুুঝে যাবেন কারা আপনার পটেনশিয়াল কাস্টমার। আপনি গুগল ফর্মের মাধ্যমে, পোস্টের কমেন্টস,মেসেজের মাধ্যমেও সার্ভে করতে পারেন
  • ৪. বর্তমান কাস্টমার:- আপনার বর্তমান কাস্টমার কারা, তারা কোন ক্যাটাগরির সেসব নিয়ে যদি একটু এনালাইসিস করেন তো সেখান থেকেই আইডিয়া পেয়ে যাবেন আপনার টার্গেট কাস্টমার কারা হবে। এক্ষেত্রে আপনার পেইজের ইনসাইটসেই প্রচুর তথ্য পেয়ে যাবেন।

উপরে আমরা জেনেছি কোন কোন উপায়ে কাস্টমার খুঁজে পাওয়া যায়। এবার জানবো কিভাবে টার্গেট করতে হয়। আগেই বলে রাখছি আমার এই পোস্টটিও কিন্তু সর্বসর্বা নয়,আপনি বিষয়গুলো সম্পর্কে গুগলে খোঁজ করলে আরো ডিটেইলস জানতে পারবেন..

  • ১. জেন্ডার:- কাস্টমার টার্গেট করার প্রথম গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টই হচ্ছে জেন্ডার সিলেক্ট করা। আপনার পণ্যটি কাদের জন্য? ছেলে না মেয়ে? ধরুন আপনি সেল করছেন শাড়ি, কিন্তু টার্গেট করে রাখলেই পুরুষদের। তাহলে নিশ্চয় আপনি আশা অনুরূপ ফল পাবেন না। হ্যাঁ, আমি এটা বলছি না যে পুরুষরা একদমই কিনবে না। তারাও অন্যদের জন্য কিনতে পারে বটে,কিন্তু শাড়ি তো সরাসরি মেয়েদের সাথে সম্পর্কযুক্ত।
  • ২. বয়স:- প্রোডাক্ট ভেদে বয়স সিলেক্ট করাটা খুব বেশি জরুরি। প্রতিটি প্রোডাক্ট নির্দিষ্ট একটা বয়সের মানুষদের মধ্যেই বেশি চাহিদা থাকে। যেমন অল্প বয়সী ছেলেদের শার্ট এবং একটু বয়স্কদের শার্টের মধ্যে কিন্তু বিশাল পার্থক্য আছে। আপনি অল্প বয়সীদের যে কথার বা কনটেন্টের মাধ্যমে আগ্রহী, কনভিন্স করতে পারবেন। বয়স্কদের কিন্তু সেটা পারবেন না। তাই প্রোডাক্ট, কনটেন্ট লেখার সময় এই বিষয়গুলো আপনাকে সবসময়ই নজরে রাখতে হবে৷ সব বয়সীদের জন্য প্রোডাক্ট ভেদে আলাদা আলাদা কনটেন্ট রেডি করতে হবে।
  • ৩.লোকেশন:- আচ্ছা একটা কথা বলুন তো, চট্টগ্রামের মানুষের লাইফস্ট্যাইলের সাথে ঢাকার বা রাজশাহীর মানুষের লাইফস্ট্যাইল কি মিলবে?? বা খুলশির মানুষের সাথে পতেঙ্গের মানুষের লাইফস্ট্যাইল?? নিশ্চয় মিলবে না তাই না?? ঠিক এই কারণেই আপনাকে কনটেন্ট রেডি করার সময়,প্রোডাক্টের টার্গেট কাস্টমার সিলেক্ট করার সময় আপনাকে লোকেশনটা খেয়াল রাখতে হবে। যে এলাকার মানুষ যেমন তেমনই করেই আপনাকে প্রোডাক্টটি রেডি করতে হবে।
  • ৪.আচরণ:- ধরুন ১৮ বছরের দুইটা ছেলে। একজন উচ্চবিত্ত পরিবারের আরেকজন মধ্যবিত্ত। তাহলে বলুন তো, দুইজনের আচরণ, পছন্দ-অপছন্দ কি একই হবে। আপনি ২য় জনকে যেভাবে সন্তুষ্ট করতে পারবেন সেই একই ভাবে কি ১ম জনকে সন্তুষ্ট করতে পারবেন?? নিশ্চয় না, তাইনা?? ঠিক এই কারণেই আপনাকে দেখতে আপনার পণ্যটি কাদের স্ট্যান্ডার্টের সাথে যাচ্ছে। সেটা এনালাইসিস করে সেভাবেই আপনাকে প্ল্যান সাজাতে হবে।
  • ৫.ধর্ম:- এই বিষয়টি নিয়ে আমরা খুব একটা কথা বলি না। কিন্তু এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা জিনিস। ধরুন আপনি মেজবানি মাসলা বিক্রি করেন। আচ্ছা বলুন তো এটা কি সব মানুষ কিনবে?? সনাতন সম্প্রদায় যারা গরু খায় না তারা কি এটা কি কিনবে?? কিন্তু আপনি যদি তাদের এটা কেনানোর জন্য কনভিন্স করানোর চেষ্টা করেন তাহলে তারা তো কিনবেই না উল্টো আপনার সম্পর্কে নেগেটিভ ধারণা নিয়ে ফেলতে পারে । তাই কাস্টমার টার্গেট, কনটেন্ট রেডি করার সময় অতি অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে সেটা কারো ধর্ম অনুভূতিতে আঘাত দিচ্ছে কিনা ।

মোটামুটি এই ৫টি পয়েন্ট হচ্ছে মূল। এর বাইরেও আরো অনেক পয়েন্ট আছে যেগুলো কাস্টমার টার্গেটিং করার ক্ষেত্রে বিবেচনায় আনতে হয়। সবগুলো নিয়ে লিখতে গেলে পোস্টটি বিশাল বড়, বোরিং হয়ে যাবে, তাই কষ্ট করে একটু গুগল থেকেই খুঁজে নেওয়ার অনুরোধ রইলো।

এই তো গেল কিভাবে টার্গেটিং করবো, কিন্তু বড় প্রশ্ন হচ্ছে আমরা এটা কেন করবো?? কাস্টমার টার্গেটিং এর সুবিধাটা কি?? আমি থাকতে আপনাদের চিন্তার কোন কারণ নেই, আপনাদের কষ্ট কমাতে, চিন্তা কমাতে সেটা নিয়েও লিখছি ছোট করে…

  • . একটি সঠিক টার্গেটিং বিক্রেতার প্রচুর সময় বাঁচিয়ে দেয়। আপনি যখন জানবেন আপনাকে কার কাছে পৌঁছাতে হবে তখন নিশ্চয় সেটা অনেক সহজ হয়ে যাবে, তাই না??
  • . টার্গেট কাস্টমারের কারণে যেহেতু একটা নির্দিষ্ট ক্যাটাগরিতে চলে আসে তাই এটা প্রচুর অর্থ বাঁচিয়ে দেয়। আমরা কমন অভিযোগ শুনি, “বুস্ট করে লাভ হয় নি। এটার প্রধান কারণে হচ্ছে আপনি টার্গেটিং ঠিকমত করেন নি।
  • . যেহেতু আপনি এখন জানেন আপনাকে কার কাছে, কোথায় যেতে হবে,তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই আপনার প্ল্যানিং করতে অনেক বেশি সহজ হব।
  • . টার্গেটিং এর ফলে যেহেতু আপনার অর্থ,সময়, পরিশ্রম প্রচুর বেঁচে যাচ্ছে, তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই বলা যায় এতে আপনার প্রফিট মার্জিন অনেক বেড়ে যাওয়ার জোর সম্ভাবনা থাকছে।

 উপরের পয়েন্টগুলোর বাইরেও আরো প্রচুর বিষয় আছে, সেসব নিয়ে লিখতে গেলে পুরো উপন্যাস হয়ে যাবে, বোরিং হয়ে যাবে। তাই সে-সব নিয়ে নাহয় অন্য কোথাও আলোচনা হবে

পোস্টটি কেমন লাগলো কমেন্টস করে জানাতে ভুলবেন না। যদি পোস্টটি গুরুত্বপূর্ণ এবং সবার জানা উচিত বলে মনে করেন তো শেয়ার করে বাকিদের পড়ার সুযোগ করে দিতে পারেন। ধন্যবাদ কষ্ট করে এত বিশাল বোরিং লেখাটি পড়ার জন্য ….

 

We will be happy to hear your thoughts

Leave a reply

PlanB Solution
Logo
Enable registration in settings - general
Shopping cart